
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বুধবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, ২০২৬ বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো কোন কোন শহরে আয়োজন করা হবে সেই সিদ্ধান্ত কোনো দেশের সরকার নয়, বরং ফিফা এই সিদ্ধান্ত নেবে।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প বিশ্বকাপের ভেন্যু বদলে ফেলার সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছিলেন, তিনি চাইলে বিশ্বকাপের ১০৪ ম্যাচের জন্য ভেন্যু শহরগুলোকে ‘অনিরাপদ’ ঘোষণা করে পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে পারেন। অথচ ফিফা ২০২২ সালেই বিশ্বকাপের ভেন্যু চূড়ান্ত করেছে। সেই তালিকায় রয়েছে নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস ও সান ফ্রান্সিসকোর কাছাকাছি এনএফএল স্টেডিয়ামগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের ১১ শহরের সঙ্গে মেক্সিকোর তিনটি ও কানাডার দুটি শহর আয়োজক হিসেবে ফিফার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। আগামী বছরের ১১ জুন বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র আট মাস আগে ভেন্যু পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে বড় ধরনের আইনি ও সাংগঠনিক জটিলতার মুখে পড়তে হবে।
লন্ডনে গতকাল খেলাধুলাভিত্তিক এক ব্যবসায়িক সম্মেলনে ফিফার সহসভাপতি ভিক্টর মন্টাগলিয়ান এ নিয়ে বলেন, ‘এটি ফিফার টুর্নামেন্ট, ফিফার এখতিয়ার, সিদ্ধান্তও ফিফাই নেয়।’

ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবিটি ক্লাব বিশ্বকাপের সময় তোলাএএফপি
মন্টাগলিয়ান উত্তর আমেরিকার ফুটবল সংস্থা কনকাক্যাফের সভাপতির দায়িত্বেও আছেন। তাঁর মতে, বর্তমানে যেকোনো রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের চেয়েও ‘বড়’ খেলাধুলা। তাঁর ভাষায়, ‘বর্তমান বিশ্বনেতাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি—ফুটবল তাঁদের চেয়েও বড়, তাঁদের শাসন, সরকার কিংবা স্লোগানের ঊর্ধ্বেও টিকে থাকবে ফুটবল। এটাই আমাদের খেলাটির সৌন্দর্য এবং এটা কোনো ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের চেয়েও বড়।’
ট্রাম্পের সঙ্গে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ২০২৬ বিশ্বকাপ সামনে রেখে হোয়াইট হাউসে ইনফান্তিনোর যাতায়াতও বেশ নিয়মিত। আয়োজক শহরগুলো নিরাপত্তাহীন বিবেচনায় বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গে ইনফান্তিনো প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।
ট্রাম্প গত সপ্তাহে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিশ্বকাপের আয়োজক কোনো শহর যদি তাঁর অভিবাসন ও অপরাধ দমন নীতির বিরোধিতা করে, তবে সেটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ম্যাচ সরিয়ে নেওয়া যেতে পারে। ট্রাম্পের ভাষায়, ‘আমি যদি মনে করি (ভেন্যু) অনিরাপদ, তাহলে (ভেন্যু) সরিয়ে নেব।’ বিশ্বকাপ হোক কিংবা ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক, যে আয়োজক শহর ‘সামান্যতম ঝুঁকিপূর্ণ হবে, আমরা সেখান থেকে (ম্যাচ) সরিয়ে নেব। তবে আমি আশা করি, এমন কিছু ঘটবে না।’
বিশ্বকাপ ও অলিম্পিক আয়োজন নির্ভর করে স্বাগতিক দেশের সরকারের সহযোগিতার ওপর। নিরাপত্তা, ভিসাপ্রক্রিয়া ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য শত শত মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিতে হয় আয়োজক দেশকে।

ফিফা সহসভাপতি ভিক্টর মন্টাগলিয়ানফিফা
মন্টাগলিয়ান জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার ফিফার নয়, ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফার। বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের জুরিখে ফিফা কাউন্সিলের বৈঠকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ইসরায়েল অংশ নিতে পারবে কি না, সে বিষয়ে কোনো আলোচনা হবে না বলেও জানান মন্টাগলিয়ান।
ফিফার এই সহসভাপতির ভাষায়, ‘প্রথমত, ইসরায়েল উয়েফার সদস্য। যেমন আমার অঞ্চলের সদস্য দেশ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার আমার, ইসরায়েল নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ারও উয়েফার। আমি শুধু প্রক্রিয়াই নয়, তাদের সিদ্ধান্তকেও সম্মান করি।’
৩৭ সদস্যের ফিফা কাউন্সিলে উয়েফার প্রতিনিধি রয়েছেন আটজন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর গত সপ্তাহে জানিয়েছে, ইসরায়েলকে বিশ্বকাপ থেকে নিষিদ্ধ করার যেকোনো প্রচেষ্টা ঠেকাতে তারা কাজ করবেন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এ নিয়ে বিবিসি স্পোর্টকে বলেন, ‘ইসরায়েলের জাতীয় ফুটবল দলকে বিশ্বকাপ থেকে নিষিদ্ধ করার কোনো চেষ্টা যেন সফল না হয়, সে জন্য আমরা অবশ্যই কাজ করব।’
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের আটজন বিশেষজ্ঞ ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানান ফিফা ও উয়েফার প্রতি। এই আট বিশেষজ্ঞের মধ্যে ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেস্কা আলবানিজও আছেন। তাঁদের ভাষায়, ‘অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে চলমান গণহত্যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে’ এই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।